অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনস্থলে এসে তিনি এ ঘোষণা করেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক দল; যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। হাইকোর্টের আদেশ শোনার পর দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আপাতত আমার আন্দোলন স্থগিত রাখব। সরকারকে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে, তারা কী করে, তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কার্যক্রমের নির্দেশনা আসবে। তিনি বলেন, আমি আসার সময় আমাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। হাইকোর্টে একটি ভুয়া রিট, বলা যায় সেই রিট দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে মেয়র পথে শপথ করানো থেকে বাধাগ্রস্ত করানোর একটা অপচেষ্টা করা হয়েছিল। সব শেষে আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেহেতু আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমরা আশা রাখব বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আর একদিনও কালক্ষেপণ না করে, অবিলম্বে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে তাদের আগামী দিনের এজেন্ডা জনগণের কাছে ফুটিয়ে তুলে ধরবে। আজকে যেহেতু আমরা রায়টি পেয়েছি, যদি সরকার আবারও টালবাহানা করে, তাহলে কালকে সকালে আমরা আবার এখানে এসে ঘেরাও দেব। তিনি বলেন, এই কর্মসূচির ফলে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। জনগণ দুর্ভোগে পড়ে। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকে। নাগরিক বিভিন্ন সভা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। সেটার জন্য আমাদের নেতা এবং আমি সাধারণ জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। শুরুতে কিন্তু আমাদের আন্দোলনের পরিকল্পনা ছিল না। বর্তমান সরকার অধিকার বঞ্চিত করতে গিয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, তখন আমরা বাধ্য হয়ে এ ধরনের কর্মসূচিতে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নেই। ইশরাক হোসেন বলেন, গতকাল আমি বলেছিলাম, বর্তমান সরকারের ভেতরে যে দু’জন ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছে, যারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং সরাসরি সংগঠক হিসেবে কাজ করছে। তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন শেষ হবে না, এই ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি আমার ঘোষণাকে পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
ইশরাক হোসেন আরও বলেন, রায় এবং শপথ আলাদা বিষয়, এটা হয়ে যাওয়া মানে প্রথম যে দাবিটি করেছিলাম, ছাত্র প্রতিনিধিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করতে হবে, সেটা কিন্তু পরিবর্তন হবে না। সেই দাবি সেই দাবির জায়গায় থাকবে, হয়তোবা সরকারের সঙ্গে আমাদের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আলাপ-আলোচনা করে এটি সমাধানের চেষ্টা করবেন। তখন যদি না হয় আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা একটা একটা ধাপ পার হয়ে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে যদি সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে হয়, তাহলে তৃণমূলের বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে এই কৃতিত্ব দিতে হয়। তারা কষ্ট করে আন্দোলনকে সংগঠিত করেছে। যে আন্দোলনে ঢাকাবাসী অংশগ্রহণ করে সরকারকে বাধ্য করেছে তাদের জায়গা থেকে সরে আসতে। আমরা সরকারকে পর্যবেক্ষণে রাখব। তারা ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে এখন কী ধরনের আচরণ করে সেটি দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল এটা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তকর লেখা লেখছে। পোস্ট দিচ্ছে। ভুল আইনি ব্যাখ্যা দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, উনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। উনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা বলতে চাই, উনার আশপাশে যে কুলাঙ্গার রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের আপনি অপসারণ করে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। এর আগে গত বুধবার সকাল থেকে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে কাকরাইলে অবস্থান নেন তার সমর্থকরা। তারা সারারাত সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করছেন তারা। যমুনারে যমুনা আমরা কিন্তু যাব না, এই মাত্র খবর এলো ইশরাক ভাই মেয়র হলো, এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার, দফা এক দাবি এক নির্বাচিত সরকার, যমুনারে যমুনা শপথ ছাড়া যাব না- বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

আন্দোলন স্থগিত করেছেন ইশরাক
- আপলোড সময় : ২৩-০৫-২০২৫ ১২:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৫-২০২৫ ১২:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ